লেখা: আবুল কাসিম
পর্ব ৬- (১০) ইবনে আবিল হাদীদ বর্ণনা করেছেন যে ,
"রাসুল (সাঃ) এর পালিত কন্যা জয়নাবের স্বামী আবুল আস । যাকে মুসালমানরা বন্দী করে কিন্তু পরে অন্যান্য বন্দীদের ন্যায় তাকেও মুক্ত করে দেয়া হয় ।
আবুল আস রাসুল (সাঃ) এর কাছে ওয়াদা করে যে , সে মক্কায় পৌছে তাঁর কন্যার মদীনায় আসার ব্যাবস্থা করবে । রাসুল (সাঃ) হায়দ হারেস এবং আরও কিছু আনসারদেরকে নির্দেশ দেন তারা যেন মক্কার আট মাইল দূরে তার জন্য অপেক্ষা করে ।
যখন সে জয়নাবকে উটে করে সেখানে নিয়ে আসবে । তখন তারা যেন জয়নাবকে মদীনায় নিয়ে আসে । যখন মক্কার কুরাইশরা হযরত জয়নাবের মক্কা থেকে বাহির হওয়ার বিষয়টা সম্পর্কে অবগত হয় তখন কাফেররা সিদ্ধান্ত নেয় যে , তাকে পথিমধ্যে হতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে । কিন্তু হাব্বার অথবা জাব্বার বিন আসওয়াদ হযরত জয়নাবের উটের কাছে পোঁছায় এবং তার উপরে তরবারি দ্বারা আঘাত করতে থাকে ।
হজরত জয়নাব ভয় পাওয়ার কারণে তার অকালে গর্ভপাত ঘটে এবং অবশেষে তিনি মক্কায় ফিরে যেতে বাধ্য হন ।
রাসুল (সাঃ) উক্ত খবর শোনার পরে অত্যান্ত রাগান্বিত হন । যখন মুসলমানরা মক্কা বিজয় করে তখন তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিলেও হযরত জয়নাবের গর্ভের সন্তানের হত্যাকারীকে তিনি ক্ষমা করেননি ।
ইবনে আবিল হাদীদ বলেন --
আমি যখন আমার ওস্তাদ আবু জাফর নাক্বিবের কাছে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করি ।
তখন তিনি আমাকে বলেন , "যদি রাসুল (সাঃ) তার পালিত কন্যা জয়নাবের অকালে গর্ভপাত হওয়া বাচ্চাটির মৃত্যুর কারণে তাকে ক্ষমা করেননি, তাহলে যার কারণে হযরত ফাতিমা যাহরা (সাঃআঃ) এর অকালে গর্ভপাত হয়েছিল তখন যদি রাসুল (সাঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি কখনও উক্ত সন্তানের হত্যাকারীকে ক্ষমা করতেন না। ³⁰
উল্লেখিত আহলে সুন্নাত হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বারা এটা স্পষ্ট হয় যে , শীয়াদের ন্যায় তাদের মাঝেও বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে । কেননা স্বয়ং ইবনে আবলি হাদীদ বিষয়টিকে নিজের কথা দ্বারা ব্যাক্ত করেছেন। ³¹
যে পবিত্র গৃহে ফেরেশতাগন হরহামেশা বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করতেন । নবীজী (সাঃ) এর সেই পবিত্র ওহীর গৃহও আক্রান্ত হল । ঘটনার বিস্তারিতে না যেয়ে এখানে শুধু বিভিন্ন বিখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থের কথা উল্লেখ করা হল -
"আল্লাহর শপথ , আমি এ ঘর জ্বালিয়ে দেব , যদি না আশ্রয় গ্রহনকারীরা বাইআত হবার জন্য ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে"।..... ³²
ইবনে আবিল হাদীদ আরও বলেন,
"আমার ওস্তাদ আমাকে বলেন, তবে তুমি উক্ত ঘটনাটি আমার নাম নিয়ে বর্ণনা করবে না কেননা বিষয়টি হচ্ছে খুবই স্পর্শকাতর"। ³³
"সেই আল্লাহর শপথ , যার হাতে ওমরের প্রান , হয় ঘর ছেড়ে বের হবে , না হয় তাতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেব" ।
ওনাকে বলা হল ,নবী দুলালী যাহরা (সাঃআঃ) এ ঘরের মধ্যে রয়েছেন ,তখন হযরত ওমর বললেন , "থাকুক" ! ³⁴
"খলীফার আজ্ঞাবাহীরা আগুন জ্বালিয়ে দিলেন , তারপর দরজা লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন"। ³⁵
"২য় খলিফা হযরত ওমর বাইআত গ্রহনের দিনগুলোতে হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) এর পাঁজরের উপর জ্বলন্ত দরজা ফেলে দেন । ফলে তাঁর গর্ভস্থিত সন্তানের গর্ভপাত ঘটে । তিনি বাড়ীর ভেতরে যারা ছিলেন তাঁদের সমেত ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতেও নির্দেশ দেন।" ³⁶
[এতগুলো ঐতিহাসিক দলিল দেওয়ার পর উক্ত ঘটনাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। তবুও একদল খারেজী সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় নতুন নতুন ইতিহাস রচনা করে আসছে - ভবিষ্যতেও করবে।]
■ তথ্যসূত্র :-
(1) শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ , খন্ড ২ , পৃষ্ঠা - ৬০।
(2)নাহজ আল বালাঘা, মূল:আলী ইবনে আবী তালিব, বাংলা অনুবাদ - জেহাদুল ইসলাম, প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০০০, দ্বিতীয় মুদ্রণ : জুন ২০০১, খুৎবা নং ২০১, পৃষ্ঠা ২৬০।
(3) মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড/৫৫; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৬৬; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড / ২২১; ইবনে কাসির, ৫ম খণ্ড / ২৪৬ এবং আরো অনেক সূত্র যার তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ।
(4) প্রাগুক্ত।
(5) আর রিয়াযুন নাযরাহ, ১ম খন্ড / ১৬৭; শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ, ১ম খন্ড / ১৩২ ও ৬ষ্ঠ খন্ড / ২৯৩ (সাক্বীফাহ থেকে উদ্ধৃত); তারিখে খামিস, ১ম খন্ড / ১৮৮।
(6) তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড / ১০৫।
(7) ইবনে শাহনাহ্ : “কামেল" -এর পার্শ্বটীকা; শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ, ১ম খন্ড / ১৫৬।
(8) আল-ইক্বদুল ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৬৪; আবুল ফিদা', ১ম খণ্ড/ ১৫৬।
(9) আল্-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্, ১ম খন্ড / ১২।
(10) রিয়াযুন্ নাযারাহ্, ১ম খণ্ড / ১৬৭: শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ১৩২ (সাকীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); তারীখে খামীস, ১ম খণ্ড / ১৭৮।
(11) আল্-আন্ছাবুল্ আশরাফ্, ১ম খন্ড / ১২।
(12) শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ, ২য় খন্ড / ১৩৪।
(13) তারিখে কামেল-এর পার্শ্বটীকা, পৃষ্ঠা ১১২।
(14) কানজুল 'উম্মাল্, ৩য় খন্ড / ১৪০।
(15) মুরুযুখ যাহাব, ২য় খণ্ড/ ১০০; শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড / ৪৮১।
(16) তারিখে ত্বাবারী, ৩য় খন্ড / ১৯৮ ও ১৯৯; তারিখে খামিস্, ১ম খন্ড / ১৮৮; কানজুল 'উম্মাল্, ৩য় খন্ড / ১২৮।
(17) শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্, ২য় খন্ড / ১৩৪, ৬ষ্ঠ খন্ড / ২৮৬।
(18) তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড / ১০৫।
(19) ত্বাবারী, ২য় খণ্ড / ৬১৯; শুজুরুয যাহাব, ১ম খণ্ড/ ৪১৪; আল-ইক্বদুল্ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৬৯; কানযুল উম্মাল, ৩য় খণ্ড/ ৩৫ ও অন্যান্য সূত্র।
(20) তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড / ১১৫।
(21) শাহরিস্তানী: মিলাল ওয়া নিহাল্, ১ম খণ্ড / তেহরান সংস্করণ, পৃ. ২৬, লিডেন সংস্করণ, পৃ. ৪০।
(22) তালখিসে সাফি , খন্ড ৩ , পৃষ্ঠা - ৭৬ ।
(23) ইসবাতুল ওয়াসিয়া , পৃষ্ঠা - ১৫৩ ।
(24) বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৩, পৃষ্ঠা ১৭০ ।
(25) আল মেলাল ওয়াল নেহাল , খন্ড ১ , পৃষ্ঠা - ৫৭ ।
(26) আল ফেরাক্বু বাইনাল ফেরাক্ব , পৃষ্ঠা - ১০৭ ।
(27) সাফিনাতুল বিহার , খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৯২ / আল ওয়াফি বিল ওয়াফিয়াত, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা - ৩৪৭ ।
(28) আল ইমামা ওয়াল খেলাফা , পৃষ্ঠা ১৬০- ১৬১ ।
(29) বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩০, পৃষ্ঠা ২৯৩, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৩০ / রিয়াহিনুশ শারিয়াহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬৭ ।
(30) শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্ , খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ১৯২ ।
(31) শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২১ ।
(32) তারীখে ত্বাবারী , ৩য় খন্ড,পৃ - ২০২ ।
(33) যিন্দেগী ইমাম আলী (আঃ), পৃষ্ঠা ২৫২ ।
(34) আল ইমামাহ , ওয়াস-সীয়াসাহ, ২য় খন্ড , পৃ-১২ / শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্ , ইবনে আবীল হাদীদ ,১ম খন্ড , পৃ - ১৩৪ / আলামুন নিসা ,৩য় খন্ড , পৃ-১২০৫ ।
(35) আসলু ছুলাইম ,পৃ- ৭৪ ( নাজাফে মুদ্রিত )
(36) আল মেলাল ওয়াল নেহাল , ২য় খন্ড , পৃ- ৯৫ ।
"মা ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)-এর হত্যাকারীদের ওপর আল্লাহর লানত ও অভিশাপ বর্ষিত হোক" এবং নবী (সা.) ও আহলে বাইত (আ.)-এর ওপর আল্লাহর সালাম বর্ষিত হোক : "আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মুহাম্মদ ওয়া অজ্জিল ফারাজাহুম"।